খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২৮ জুন, ২০২৪

Breaking News

  ৩০ জুন থেকে ৩ জুলাই ভারী-অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস : আবহাওয়া অফিস
  রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই ভাই নিহত

মতিউরও পালানোর আগে ফ্ল্যাট বেচেছেন, টাকা তুলেছেন

গেজেট ডেস্ক

১৫ লাখ টাকার কোরবানির ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সদ্য ওএসডি হওয়া রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি এরই মধ্যে কিছু সম্পদ বিক্রি করেও দিয়েছেন। আরও কিছু বিক্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকে তার হিসাবে জমা টাকার একটি অংশও তুলে নিয়েছেন। মতিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে মতিউর রহমান সম্পদ বিক্রি করে দেশ থেকে পালিয়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। যদিও সরকারি সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরই এ তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। মতিউর ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। সেখান থেকে উড়াল দেবেন দুবাই। মতিউর-ঘনিষ্ঠরা বলেন, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে এমন তথ্য পেয়ে পালিয়ে যান মতিউর। পালিয়ে গিয়েও সম্পদের মায়া ছাড়তে পারেননি। গোপনে বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছেন পুরোদমে। দেশ থেকে চলে গেলেও তার সম্পদ বিক্রি করতে সমস্যা হবে না। কারণ এসব সম্পদ বিক্রির কাজ তদারকি করছেন তার ভাই এমএ কাইয়ুম হাওলাদার।

মতিউরের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মিরপুরে থাকা ফ্ল্যাটগুলোর মধ্যে দুটি ফ্ল্যাট ইতিমধ্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নরসিংদীর পার্ক বিক্রি করতেও চলছে দরদাম। যেকোনো মুহূর্তে তা বিক্রি হয়ে যেতে পারে। ব্যাংকে থাকা টাকার বড় অংশ গত রবিবার উত্তোলন করে নেওয়ার কথাও জানা গেছে।

মতিউর-ঘনিষ্ঠরা জানান, নরসিংদীর রায়পুরার মরজালে শতবিঘা জমির ওপর থাকা ওয়ান্ডার পার্ক, গাজীপুরের পুবাইলে আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট, গাজীপুরের বিভিন্ন সম্পত্তি ও রাজধানীতে থাকা ডজনখানেক ফ্ল্যাট বিক্রির চেষ্টা করছেন মতিউর। এসব সম্পদের অধিকাংশ তার নিজের নামে নয়, রয়েছে স্ত্রী-সন্তানদের নামে। যার মধ্যে প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ (লাকী) ও তার সন্তানদের নামেই রয়েছে অধিকাংশ সম্পত্তি। এর বাইরে ভাই, শ্যালকসহ অন্য স্বজনদের নামেও গড়েছেন সম্পদ।

সম্পত্তি বিক্রির তথ্য যাচাই করতে একাধিকবার মতিউর রহমানের স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া নরসিংদীর বাড়িতেও পাওয়া যায়নি তাকে।

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউরের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ব্যবহার করা চারটি গাড়ি বিক্রির দায়িত্ব পড়েছে মতিউরের ছোট ভাইয়ের ওপর। যেগুলো এখনো রয়েছে অবিক্রীত। তবে গাড়িগুলো বর্তমানে কোথায় রয়েছে, তার হদিস পাওয়া যায়নি মতিউরের একাধিক বাড়ি ঘুরেও। রাজধানীর কাকরাইলের ‘স্কাই ভিউ মমতা সেন্টার’ ভবনের ফ্ল্যাটও বিক্রির চেষ্টা করছেন তিনি। এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও বরিশালে জুতার কারখানা গ্লোবাল সুজ লিমিটেডের মালিকানাতেও রয়েছে মতিউরের সম্পৃক্ততা। এ প্রতিষ্ঠানে দুই সন্তানের নামে রয়েছে বিপুলসংখ্যক শেয়ার। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ কোম্পানিতে মতিউরের কন্যা ফারজানা রহমানের নামে ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ শেয়ার ও ছেলে তৌফিকুর রহমানের নামে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার রয়েছে। এসব শেয়ার বিক্রি করে অর্থ সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াও চালাচ্ছেন মতিউর রহমান। তবে সেখানে অন্য অংশীদারদের মারপ্যাঁচে খোয়াতে হতে পারে সম্পদের ভাগ। সাভারের বিলামালিয়া মৌজায় মতিউরের নিজের নামে কেনা ১৩ শতাংশ জমি বিক্রির জন্যও চলছে দামদর।

এদিকে গতকাল সোমবার মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আদেশ দেয়। দুদকের হয়ে আবেদনটি করেছিলেন উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন। দুদকের এ কর্মকর্তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি মতিউর রহমানের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

মতিউর-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার পর সম্পদ ও ব্যাংকে থাকা অর্থ ক্রোকের (জব্দ) মতো সিদ্ধান্তও আসতে পারে। তাই আগে থেকেই সম্পদ বিক্রি এবং ব্যাংকে থাকা সব অর্থ তুলে নেওয়ার প্রচেষ্টা মতিউরের। আর এসব কাজ আড়ালে থেকে করছেন তার ছোট ভাই এমএ কাইয়ুম হাওলাদার। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া মতিউরের শ্যালকের মোবাইল ফোনেও কল করে বন্ধ পাওয়া যায়।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!